জাতীয় পরিচয় পত্র বা এনআইডি কার্ড (NID ) একজন বাংলাদেশী নাগরিকদের মৌলিক বা ন্যায্য অধিকার। একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের জন্য জাতীয় বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই জাতীয় পরিচয় পত্র থাকতে হবে। জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা এনআইডি কার্ড হচ্ছে একজন ব্যক্তির নাগরিকত্বের প্রমাণ। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সেবা সমূহ গ্রহণ করতে হলে জাতীয় পরিচয় পত্র অত্যাবশ্যক।
বর্তমানে বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্রের দুইটি ধরন রয়েছে-
১। লেমিনেটিং / অনলাইন প্রিন্ট কপি
২। স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র (Smart NID Card)
আমাদের এই NIDBD.io স্পেশালাইজড ওয়েব ব্লগে জাতীয় পরিচয় পত্র তথা স্মার্ট কার্ড সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্যমূলক পরামর্শ ও জরুরী অবস্থা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পেয়ে যাবেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র কি কি কাজে লাগে?
জাতীয় পরিচয় পত্র যেহেতু দুই ধরনের হয়ে থাকে। সেহেতু উভয় ধরনের ই মধ্যে একজন নাগরিকের নাম, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, ঠিকানা ইত্যাদি মৌলিক তথ্য উল্লেখ করা থাকে। যা দিয়ে তার পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
ভোট দেওয়া, পাসপোর্ট তৈরি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা ইত্যাদি সরকারি বেসরকারি সেবা গ্রহণের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট। সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সার্ভে, বা জরিপে অংশগ্রহণ, জমি ক্রয় বিক্রয়, ইত্যাদি কাজে জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্যবহার হয়।
জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আবেদন করার নিয়ম – ভোটার নিবন্ধন
বর্তমানে একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক এর যদি ভোটার আইডি কার্ড না থেকে থাকে তাহলে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য দুইটি পদ্ধতিতে আবেদন করতে পারবে।
নতুন ভোটার আইডি কার্ডের জন্য ভোটার হওয়ার আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে আপনার জানা উচিত। প্রতি তিন বছর পর পর নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নতুন ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়ে থাকে যেটা বাড়ি বাড়ি পর্যায়ে গিয়ে নতুন ভোটারদের তথ্য হালনাগাদ করা হয়ে থাকে। আপনি যদি এর পূর্বে ভোটার না হয়ে থাকেন তাহলে উক্ত কার্যক্রমে আপনার তথ্য দিয়ে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।
তবে এর বাইরেও আপনি অনলাইনে মাধ্যমে নিজে নিজে ভোটার আইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারেন এক্ষেত্রে বিস্তারিত নিচের চারটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে
- ধাপ ১ঃ অনলাইন আবেদন – নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইট nidw.gov.bd ভিজিট করে ভোটার আবেদন লিংকে গিয়ে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করে ভোটার আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এরপর আবেদনপত্র প্রিন্ট করে নিতে হবে।
- ধাপ ২ঃ নির্বাচন অফিসে আবেদন দাখিল – অনলাইন আবেদন প্রিন্ট করে সেটার সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আপনার স্থানীয় উপজেলা নির্বাচন অফিসে দাখিল করতে হবে
- ধাপ ৩ঃ বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্ট – উপজেলার কর্মকর্তাগণ আপনার তথ্য যাচাই-বাছাই করে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করবে এবং পরিশেষে আপনাকে ভোটার নিবন্ধন ফরমের একটি অংশ প্রদান করবে যেটা পরবর্তীতে ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে প্রয়োজন হবে।
- ধাপ ৪ঃ ভোটার আইডি কার্ড সংগ্রহ – আপনার আবেদনটি চূড়ান্ত হলে মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে আপনার এন আইডি কার্ডের নম্বর পেয়ে যাবেন, পরিশেষে নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইট থেকে এনআইডি নাম্বার ব্যবহার করে nid card download করতে পারবেন। আর এটি একদম সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
ভোটার হওয়ার নিয়ম
ভোটার আইডি কার্ড করতে কি কি লাগে?
নতুন ভোটার আবেদনের ক্ষেত্রে ভোটার নিবন্ধন ফরম ১৩ প্রিন্ট, + পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি + চেয়ারম্যান প্রত্যয়ন পত্র + সার্টিফিকেট ( অপশনাল ) + অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ ( বাধ্যতামূলক) + আবেদনের প্রেক্ষিতে অন্যান্য কাগজ দরকার হতে পারে
এনআইডি কার্ড হারিয়ে গেলে কী করণীয়?
এনআইডি কার্ড হারিয়ে গেলে প্রথমে স্থানীয় থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করতে হবে। এরপর, জিডির কপি নিয়ে নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে অথবা অনলাইনে নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। নতুন কার্ড সংগ্রহ করতে একটি নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করতে হয়। স্মার্ট কার্ড হারিয়ে গেলেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন কিভাবে করবেন?
জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের সাধারণত ছোট ছোট ভুল যেমন টাইপিং কিংবা প্রিন্টিং অথবা নামের ছোটখাটো ভুল অথবা জন্ম তারিখের ভুল হলে সেটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে কিংবা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন আবেদন করা যায়।
তবে নামের সম্পূর্ণ অংশ পরিবর্তন কিংবা সংশোধন করা আদৌ সম্ভব নয়। তবে জন্ম সাল পরিবর্তন করা সম্ভব প্রমাণ সাপেক্ষে। তবে একটি ভোটার আইডি কার্ড সর্বোচ্চ ১ বার সংশোধন করা সম্ভব।
ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করার নিয়ম
ভোটার আইডি কার্ড চেক কিভাবে করা যায়?
ভোটার আইডি কার্ড চেক করার জন্য পূর্বে ভোটার তথ্য নামক একটি সার্ভিস নির্বাচন কমিশন ওয়েব সাইটে থাকলেও বর্তমানে এটি বন্ধ রয়েছে। তাই ভোটার তথ্য যাচাই করার জন্য একমাত্র অন্যতম উপায় হচ্ছে এস এম এস। অথবা যে কারো ভোটার আইডি কার্ড এর তথ্য সঠিক অথবা ভুল যাচাই করতে হলে নির্বাচন অফিসে যেতে পারেন অথবা যে কোন সরকারি অফিস যে জায়গায় এন আই ডির মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয় সেখানে যেতে পারেন।
ভোটার আইডি কার্ড চেক করার নিয়ম
এনআইডি কার্ডের সেবা সংক্রান্ত ফি কত?
ভোটার আইডি কার্ডের সেবা সমূহ গ্রহণ করতে হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি পরিশোধ করতে হয়, কোন খাতে কত ফি সেটা নির্ভর করবে সেবার উপরে। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফি ক্যালকুলেটর থেকে আপনার নির্দিষ্ট ফি দেখে নিতে পারেন।
ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড কিভাবে করব?
এনআইডি কার্ডের অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনলাইন পোর্টাল এ যান এবং আপনার এনআইডি নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে লগইন করুন। এরপর প্রোফাইল থেকে “ডাউনলোড” অপশন থেকে অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে পারবেন। বিভিন্নভাবে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড করা যায় যেমন
- টোকেন নাম্বার দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড
- ভোটার নাম্বার দিয়ে ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড
- হারানো ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড
- সংশোধিত ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড
এনআইডি কার্ড সম্পর্কে আরও তথ্য কোথায় পাওয়া যাবে?
এনআইডি কার্ড সম্পর্কিত আরও তথ্যের জন্য নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা স্থানীয় নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও, ১০৫ হেল্পলাইন নম্বরে কল করে সহায়তা পেতে পারেন।
স্মার্ট কার্ড কিভাবে পাওয়া যাবে?
নতুন ভোটার নিবন্ধন হওয়ার পরে অনেকটা সময় পার হওয়ার পরে অনেকে স্মার্ট কার্ড পায় না। প্রধান কারণ হলো স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট নিয়ে দুর্ভোগ। আপনার স্মার্ট কার্ড যদি প্রিন্ট হয়ে থাকে তাহলে স্মার্ট কার্ড বিতরণ কর্মসূচিতে আপনার স্মার্ট কার্ড পেয়ে যাবেন। এবং জেনে রাখা ভালো বর্তমান তথ্য অনুযায়ী একজন ব্যক্তি ১ বার স্মার্ট কার্ড ফ্রিতে পেয়ে পাবে, এবং দ্বিতীয়বার অর্থাৎ হারিয়ে গেলে পুনরায় স্মার্ট কার্ড পাওয়াটা অনেক ঝামেলা এবং অনেক খরচার বিষয় আছে।